বিশ্ব রাজনীতির ইতিহাসে গত শতাব্দী নানা নাটকীয়তা ও সমীকরণে শেষ হয়েছে। শতাব্দীজুড়ে ছিলো বড় দুটি বিশ্বযুদ্ধের অভিজ্ঞতা ও অর্ধশত বছর ধরে চলেছে দুই পরাশক্তির মধ্যে কথিত ঠাণ্ডা যুদ্ধ। ঠাণ্ডা যুদ্ধের পতনের পর নব্য উদারবাদী তাত্ত্বিকরা আঞ্চলিক সংগঠনের উপর গুরুত্ব দিয়ে বিশ্ব শান্তি ও সমতা তৈরির স্বপ্ন দেখেন। তবে একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে আমেরিকার টুইন টাওয়ারে নাইন-ইলেভেন হামলা ও স্যামুয়েল হান্টিংটনের ক্লাস অব সিভিলাইজেশন তত্ত্ব আন্তর্জাতিক রাজনীতির গতিবিধি পাল্টে দেয়।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর আন্তর্জাতিক সম্পর্কের আলোচনায় উদারবাদী তত্ত্বকে আমলে নিয়ে জাতিপুঞ্জ ঘটিত হয়। কিন্তু ২৫ বছরের মধ্যে সংঘটিত হওয়া আরেকটি বিশ্বযুদ্ধ জাতিপুঞ্জের পতন ঘটায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জয়ী অক্ষ নিজেদের আয়ত্বে নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার সূচনা করে জাতিসংঘ গঠন করে। রাজনীতির বাঁকে বাঁকে আসে উত্থান-পতন। রাজনীতির এই খোলা ময়দানে একসময় কেউ মহানায়ক হিসেবে বিবেচিত হন, একই ব্যক্তি আবার পরিণত হন খলনায়কে। পাকিস্তানের নওয়াজ শরিফ এমনই একজন। পাকিস্তানের তিন-তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী তিনি। তবে এখন তিনি একজন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি।

বর্তমানে সমগ্র আফগানিস্তান তালেবানদের দখলে, তারা আগের চেয়ে আরো শক্তিশালী। অন্য দিকে ২০২১ সালের ৩০ আগস্ট আমেরিকান সৈন্যরা লজ্জাজনকভাবে রাতের অন্ধকারে আফগানিস্তান থেকে পলায়ন করেছে। এটা কেবল আফগানিস্তান থেকে পলায়ন নয়, বরং বিশেষজ্ঞদের মতে এ ঘটনা বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি হতে পারে। শুরু হয়েছে নতুন হিসাব-নিকাশ। আমেরিকা বিশ্ব নেতৃত্বের আসন থেকে ছিটকে পড়তে পারে। মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ আমেরিকার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। অন্য দিকে রাশিয়া তালেবানদের ব্যাপারে এক রকম নীরব থাকলেও চীন এবং পাকিস্তান তালেবানের সাথে যে ভালো সম্পর্ক রাখবে তা বুঝাই যাচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে ২০ বছরের আফগান যুদ্ধে আমেরিকার লাভের চেয়ে ক্ষতিই হয়েছে বেশি। বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে নতুন শক্তির আগমন হতে পারে কি-না তা এখনো বলা যাচ্ছেনা। তবে বিশ্বের শান্তিকামী মানুষদের প্রশ্ন হলো যে, অবশেষে যদি তালেবানের সাথে চুক্তি করে ইঙ্গ-মার্কিনিরা আফগানিস্তান ছাড়তে হলো তাহলে দীর্ঘ ২০ বছর পর্যন্ত একটি দরিদ্র দেশে যুদ্ধ চাপিয়ে রাখা হলো কেন? বিশ্বের একমাত্র পরাশক্তি আমেরিকা ঘোষিত ‘মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসী’ বা এক নম্বর সন্ত্রাসীর লাশ এত তড়িঘড়ি করে কেন সাগরে ফেলে দেয়া হলো? যে লোকটির জন্য এত যুদ্ধ, এত ধ্বংসযজ্ঞ, এত রক্তপাত তাকে নিয়ে কেন এত লুকোচুরি? এসব প্রশ্নের উত্তর হয়তো আর কোনোদিন জানা যাবে না।

একটা বিষ্ময়কর ব্যাপার হলো, বিশ্বের সবচেয়ে অত্যাধুনিক অস্ত্রে সুসজ্জিত মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা তার সবচেয়ে বিপজ্জনক শত্রুকে ধরতে ১০ বছর সময় লেগেছিল এবং তারা তাকে জীবিত গ্রেপ্তার করতে পারেনি। ২০১৩ সালে তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমর ইন্তেকাল করেন। যাই হোক, টুইনটাওয়ার ট্রাজেডির আজ ২০ বছর পূর্ণ হয়েছে। এই ২০ বছরে বিশ্ববাসী অনেক উত্থান-পতন দেখেছে। আমেরিকার প্রত্যক্ষ মদদে আফগানিস্তানে হামিদ কারজাই ও আশরাফ ঘানি দীর্ঘমেয়াদে রাষ্ট্র পরিচালনা করেন। এরই মাঝে খোদ আমেরিকায়ও ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে মোট চার বার। ২০০১ সালে তালেবানরা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে ২০২১ সালের ৩০ আগস্ট পর্যন্ত আফগানিস্তানে আমেরিকার নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনী অবস্থান করেছিল। ক্ষমতাচ্যুত তালেবানরা ন্যাটো বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ অব্যাহত রেখেছিল। অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়েছে তালেবান এই ২০ বছরে। মার্কিন মদদপুষ্ট আফগান সরকার এবং আফগান সেনাবাহিনী ও আমেরিকার নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনী মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে দীর্ঘ ২০টি বছর চেষ্টা করেছে তালেবান এবং আল কায়দাদের নির্মূল করার জন্য। প্রায় আড়াই হাজার মার্কিন সেনাকে জীবন দিতে হয়েছে এই সময়ে আফগান যুদ্ধে। কিন্তু তালেবানদের দমন করার পরিবর্তে ২০২০ সালে কাতারের রাজধানী দোহায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তালেবান নেতাদের সাথে যুদ্ধবিরতি চুক্তি করে। এই চুক্তির মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের কাছে মূলত কি ম্যাসেজ দিয়েছিল তা বিশ্ববাসীর কাছে অনুমেয়।

তারপরও বলতে হয়— অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ একটি দেশ হলো বিশ্বের সুপার পাওয়ার আমেরিকা। সে দেশে অবস্থিত ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার তথা বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রের টুইন-টাওয়ার খ্যাত ১০০ ও ১১০তলা বিশিষ্টি সুউঁচ্চ দুটি টাওয়ার ২০০১ সালের ১১ সেপ্টম্বর এক দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী হামলায় ধ্বংস করে দেয়া হয়। তাও আবার খোদ আমেরিকার চারটি বিমান ছিনতাই করে, দু’টি বিমান দিয়ে আঘাত করা হয় ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের টুইন-টাওয়ারে এবং অন্য একটি বিমান দিয়ে আঘাত করা হয় আমেরিকার প্রতিরক্ষা বিভাগের সদর দপ্তর পেন্টাগনে। আর চতুর্থ বিমানটি গিয়ে বিধ্বস্ত হয় একটি গ্রামাঞ্চলে। এই নজিরবিহীন সন্ত্রাসী হামলায় চারটি বিমানের ২৬৮ জন যাত্রীসহ কয়েক হাজার মানুষ সেদিন প্রাণ হারিয়েছিল। আমেরিকার ক্ষয়-ক্ষতির হার ছিলো আনুমানিক ১০ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। এই হামলায় সারা বিশ্বে আমেরিকার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্নের ঝড় উঠেছিল। এ ঘটনায় বিশ্ববাসী মর্মাহত হয়েছিল। আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ এ হামলার জন্য সৌদি ভিন্নমতাবলম্বী ও আল-কায়দা নেটওয়ার্কের প্রধান উসামা বিন লাদেনকে দায়ী করেছিলেন। তখনকার সময়ে অর্থাৎ, ২০০১ সালে উসামা বিন-লাদেন আফগানিস্তানে অবস্থান করছিলেন। সেই সময় আফগানিস্তানের ক্ষমতায় ছিলো তালেবান। প্রেসিডেন্ট বুশ তালেবান সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করেন উসামা বিন-লাদেনকে আমেরিকার হাতে তুলে দেয়ার জন্য। কিন্তু তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা ও আফগানিস্তানের ইসলামি ইমারতের আমির উল মুমিনিন মোল্লা মুহাম্মদ ওমর কোনো প্রমাণ ছাড়া উসামা বিন-লাদেনকে আমেরিকার হাতে তুলে দিতে রাজি হননি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রেসিডেন্ট বুশ ২০০১ সালের ২৭ অক্টোবর থেকে ব্রিটেনসহ তার মিত্রদের নিয়ে আফগানিস্তানে বোমা বর্ষণ শুরু করেন। টানা দুই মাসের বোমা বর্ষণে গুঁড়িয়ে দেয়া হয় খরা-দুর্ভিক্ষপীড়িত ও যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানকে। হত্যা করা হয় হাজার হাজার নারী ও শিশু এবং নিরপরাধ মানুষকে। উৎখাত করা হয় তালেবান সরকারকে।

উসামা বিন লাদেনকে উপলক্ষ করে আফগানিস্তানে ট্যাঙ্ক, মিসাইল এবং কার্পেটিং বোমার আঘাতে কেবল তালেবান সরকারকে উৎখাত করা হয়নি বরং পাইকারি হারে নিরপরাধ বেসামরিক লোকদেরকে হত্যা করা হয় আর বন্দিদের সাথে করা হয় অমানবিক আচরণ। এ ছাড়া হামিদ কারজাইয়ের নেতৃত্বে একটি পুতুল সরকার গঠন করে সেখানে এক প্রকার দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করা হয়। অথচ টুইন-টাওয়ার ধ্বংসের ঘটনায় খোদ আমেরিকার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল। নানা রহস্য দানা বেধেছিল এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে। চাক্ষুস কোনো প্রমাণ ছাড়া বুশ প্রশাসন যেভাবে উসামা বিন লাদেনকে দায়ী করছিল তার চেয়ে জোরালোভাবে প্রশ্ন উঠেছিল খোদ আমেরিকাতেই যে, বিশ্বের সর্বাধিক উন্নত প্রযুক্তি সমৃদ্ধ নিরাপত্তা ব্যুহ ছিন্ন করে চারটি বিমান কিভাবে ছিনতাই করা হলো? অন্য কোনোভাবেও তালেবান সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করা যেত বা উসামাকে ধরার ব্যবস্থা করা যেত। কিন্তু অন্য কোনো পন্থা অবলম্বন না করে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের মাধ্যমে দুর্ভিক্ষপীড়িত একটি দেশকে তছনছ করে দেয়া হয়। যেভাবে আফগানিস্তানকে লণ্ড-ভণ্ড করে দেয়া হয় ঠিক একই কায়দায় ধ্বংস করা হয় সভ্যতার লীলাভূমি খ্যাত ইরাককে।

ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের কাছে ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র রয়েছে— এই অভিযোগে ২০০৩ সালের ২০ মার্চ থেকে ইরাকে শুরু হয় ইঙ্গ-মার্কিনিদের বিমান হামলা। বোমার আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত করা হয় দেশটিকে। অবশেষে সেখানে কোনো বেআইনি অস্ত্র পাওয়া যায়নি। তবে বহু প্রাণহানি ঘটিয়ে সাদ্দাম সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে ব্যাপক লুটপাট চালিয়ে সেখানেও মার্কিন দখলদারিত্ব নিশ্চিত করা হয়। ইরাক ও আফগানিস্তানের অন্যায় ও অসমযুদ্ধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ১০ লাখেরও বেশি নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা হয়। অবশেষে মার্কিন বাহিনী ২০০৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর সাদ্দাম হোসেনকে গ্রেপ্তার করে এবং এক প্রহসনমূলক বিচারের মাধ্যমে ২০০৬ সালের ডিসেম্বর মাসে ঈদুল-আজহার দিন সাদ্দামকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে ইঙ্গ-মার্কিনিদের পুতুল সরকারের গঠন করা একটি ইরাকি আদালত। সাদ্দাম হোসেনকে তার ছেলেদেরসহ হত্যা করা হলো, টন টন বোমা ফেলে ইরাককে বধ্যভূমিতে পরিণত করে হাজার হাজার বেসামরিক লোকদের হত্যা হলো কিন্তু ইরাকজুড়ে তন্ন তন্ন করে খোঁজার পরও কোনো ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্রের নামগন্ধ পাওয়া যায়নি। অনুরূপ আফগানিস্তানকেও দুমড়ে মুচড়ে দিয়েও উসামাকে পাওয়া যায়নি। এর পর বলা হলো যে, উসামা বিন লাদেন চলে গেছেন পাকিস্তানে। একপর্যায়ে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের ৬২ কিলোমিটার উত্তরে এবোটাবাদে একটি বাড়িতে উসামা বিন লাদেনকে পাওয়া যায় এবং সে বাড়িতেই তাকে ২০১১ সালের ২ মে মার্কিন সেনারা হত্যা করে। তবে প্রকৃতপক্ষে বিন লাদেনকেই হত্যা করা হয়েছিল কি-না এ বিষয় নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। কারণ উসামা বিন লাদেনের লাশ সাংবাদিকদের দেখানো হয়নি। মার্কিন সংবাদ মাধ্যমগুলো কেবল জানিয়েছিল যে, উসামার লাশ সাগরে ফেলে দেয়া হয়েছে। একবিংশ শতকের শুরুতে ২০০৫ সালে ফিলিপ্পি মার্টিন লিখেন তার বিখ্যাত আর্টিকেল মেক ট্রেড নট ওয়ার? এই আর্টিকেল বিশ্ব-রাজনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। ২০০৮ সালে বিশ্বব্যাপী মন্দার পর বৈরী সম্পর্কের দেশসমূহও বাণিজ্য সম্পর্কে জোর দেয়। এই সময়ে জাপানের অর্থনীতির পতন ও চীনের অর্থনীতির উত্থান নতুন এশিয়াকে সামনে আনে। কিন্তু একই সময়ে কথিত আরব বসন্তের উত্থান, চীনের মার্কিন আধিপত্য মোকাবিলায় ব্রিকস গঠন ও দরিদ্র দেশে বিনিয়োগ কূটনীতি ভূ-রাজনৈতিক নতুন সমীকরণ নিয়ে আসে। কিন্তু সব সমীকরণকে বদলে দিয়েছে কোভিড-১৯ মহামারি।

চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্ভাব্য নতুন শীতল যুদ্ধ সময়ের ব্যাপার মাত্র। চীনকে উদ্দেশ্য করে মার্কিন, ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও জাপান গঠন করেছে সামরিক জোট। কোভিড-১৯ পরিস্থিতির মধ্যে মেডিকেল সহায়তার মাধ্যমে অনেক দেশকে নিজের বলয়ে নিয়েছে চীন। চীনের নেতৃত্বে চীন, রাশিয়া, ইরান, তুরস্ক ও পাকিস্তানের জোট আলোচনায় আছে। বিপরীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বলয়ে আছে ভারত, ইসরায়েল, সৌদি আরব ও আরব আমিরাত। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে চারবার যুদ্ধে জড়ানো আরবরাই আজ ইসরাইলের নিকট বন্ধু। ইউরোপীয় ইউনিয়নের উপর আগের মতো কর্তৃত্ব নেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। জার্মানি ও ফ্রান্স নিজেরাই পরাশক্তি হয়ে উঠার স্বপ্নে বিভোর। ফলে বহুমেরু বিশ্বের উত্থান হতে যাচ্ছে। তবে এখনো বিশ্বের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেকোনো সময় বদলে দেয়ার সক্ষমতা রাখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৯ সালে ৭৩ হাজার কোটি ডলার সামরিক বাজেট করা যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বজুড়ে রয়েছে ৮০০ সামরিক ঘাঁটি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি এখনো সামরিক নির্ভর, অন্যদিকে জাতীয়তাবাদ টিকিয়ে রাখার জন্য তাদের শত্রু দরকার। সন্ত্রাসবাদের যুদ্ধের কথা বলে আফগানিস্তান, ইরাকের মতো গুরুত্বপূর্ণ মুসলিম দেশ ধ্বংস করেছে। এখন সোভিয়েত রাশিয়া, সন্ত্রাসবাদের যুদ্ধের জায়গা করে নিচ্ছে চাইনিজ ঠেকাও যুদ্ধ। চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দুই দেশই তাদের সম্ভাব্য শীতল যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি দিয়ে অনেক দেশকে নিজেদের আয়ত্বে নিচ্ছে। চলছে নতুন উপনিবেশবাদ তৈরির মহাপ্রস্তুতি। উপনিবেশবাদের চেহারাও বদলে যাচ্ছে। এখন চিত্র চলছে ‘ভূমি তোমার, সরকার ও সরকারের নিয়ন্ত্রণ আমার’। ইতোমধ্যে সিরিয়া, লিবিয়া ও আফগানিস্তানে সে ধরনের সরকার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এই ব্যবস্থা চলতে পারে আফ্রিকা ও এশিয়ার তৃতীয় বিশ্বের দেশসমূহে।

 

লেখক : গবেষক ও কলামিস্ট